প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন ও সেই বিষয়ে আদিবাসী জনগণের প্রতিক্রিয়া

সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ, বাংলায় ওয়াহাবি-ফরাজি আন্দোলন

নীলবিদ্রোহ
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ)
1.বাংলার ওয়াট টাইলার’ নামে পরিচিত ছিলেন-
(A) তাঁতিয়া টোপি
(B) রামরতন মল্লিক
(C) বিষুচরণ বিশ্বাস
(D) দিগম্বর বিশ্বাস
Ans. (C) বিষুচরণ বিশ্বাস
2.’খুঁৎকাঠি প্রথা’ যে সমাজে প্রচলিত ছিল-
(A) সাঁওতাল
(B) মুণ্ডা
(C) কোল
(D) ভিল
Ans. (B) মুণ্ডা
3.নীল-কমিশন গঠিত হয়–
(A) ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে
Ans. (C) ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে
4.মুন্ডাদের কাছে ভগবান রূপে আখ্যায়িত হন—
(A) সুই মুণ্ডা
(B) কোল মুন্ডা
(C) বিরসা মুণ্ডা
(D) সিধু
Ans. (C) বিরসা মুণ্ডা
5.ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংঘটিত প্রথম বিদ্রোহ ছিল-
(A) চুয়াড় বিদ্রোহ
(B) সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ
(C) রংপুর বিদ্রোহ
(D) মুণ্ডা বিদ্রোহ
Ans. (A) চুয়াড় বিদ্রোহ
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন (SAQ)
1.দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সী কেন গড়ে তোলা হয়েছিল?
উত্তর: উন্নত সামরিক অস্ত্রে ব্রিটিশ সরকার কোল বিদ্রোহকে সাময়িক দমিত করলেও পুনরায় বিদ্রোহের প্রাদুর্ভাব-আশঙ্কায় তারা যথেষ্টই ভাবিত ছিল। তাই ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে চটজলদি তারা ‘দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সী’ নামে কোলদের জন্য একটি পৃথক ভূখণ্ড নির্ধারণ করে সেখানে বাইরের মানুষের প্রবেশাধিকার সংকুচিত করে এবং সেখানে কোলদের জন্য একগুচ্ছ স্বতন্ত্র নিয়ম-কানুন বলবৎ থাকে।
2.বিপ্লব বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: উজার বিপ্লব বলতে বোঝায় প্রচলিত ব্যবস্থার দ্রুত, আমূল ও স্থায়ী তথা কার্যকরী পরিবর্তন। এহেন বিপ্লব রক্তক্ষয়ী বা বিনা রক্তপাতেও সংঘটিত হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লব রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের একটি দৃষ্টান্ত। অন্যদিকে অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ইংল্যান্ডে সংঘটিত শিল্প-বিপ্লব রক্তপাতহীন বিপ্লবের একটি দৃষ্টান্ত।
3.মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য কী ছিল?
উত্তর: জহারী মুন্ডা জনগণ ঔপনিবেশিক শাসক ও স্থানীয় প্রশাসনের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়েছিল। তারা তাদের জমিতে পুরোনো যৌথ মালিকানা বা ‘খুঁৎকাঠি প্রথা’ ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই করে। এক স্বাধীন মুন্ডা রাজ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেও তাঁরা সংঘবদ্ধ হয়েছিল।
দীর্ঘ উত্তর প্রশ্ন (LAQ)
1.টীকা লেখো: কোল বিদ্রোহ।
উত্তর: কোম্পানির অপশাসন ও অর্থনৈতিক নীতির ফলে ভারতের বুকে যে অসংখ্য কষক-উপজাতি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল কোল বিদ্রোহ।
পরিচিতি: বর্তমান বিহার, ঝাড়খণ্ডের অন্তর্গত ছোটোনাগপুর, সিংভূম, মানভূম প্রভৃতি অঞ্চলে বসবাসকারী উপজাতি জনগোষ্ঠী কোল হিসেবে পরিচিত। কৃষি ও বনজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল কোল উপজাতির মানুষ আধুনিক সভ্যতা থেকে দূরে অরণ্য ভূমিতে জীবিকা নির্বাহে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। কোলরা আবার ‘হো’, ‘ওঁরাও’, ‘মুণ্ডা’ প্রভৃতি উপ-সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল।
বিদ্রোহের কারণ: কোলদের বাসভূমি অঞ্চল ক্রমে ব্রিটিশের খাজনা বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হলে বহিরাগত ইজারাদারদের উচ্চ রাজস্বের চাপ এবং অনাদায়ে নির্মম অত্যাচার কোলদের বিক্ষুদ্ধ করে তোলে। সেই সঙ্গে কোম্পানির অরণ্য আইন কোলদের চিরাচরিত অরণ্যের অধিকার কেড়ে নেয়। জীবন-জীবিকায় এই আঘাত কোলদের বিদ্রোহী করে তোলে।
বিদ্রোহের সূচনা ও বিস্তার: ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে বিদ্রোহের সূচনা হলেও ১৮৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দেই তারা প্রথম সংঘবদ্ধ বিদ্রোহের সূচনা করে। বিদ্রোহী কোলদের সঙ্গে যোগ দেয় সাধারণ চাষি, কামার, কুমোর, গোয়ালা প্রভৃতি নিম্নবর্গীয় মানুষ।
নেতৃত্ব: সাহসী নেতৃত্বগুণে কোল বিদ্রোহ ক্রমে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। বুদ্ধ ভগৎ, জোয়া ভগৎ, কোল মুণ্ডা, সুই মুণ্ডা প্রমুখের নেতৃত্বে কোল বিদ্রোহ পরিচালিত হয়।
দমন: শেষপর্যন্ত, বিরাট সেনাবাহিনী সহযোগে ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সরকার এই বিদ্রোহ দমন করে।
গুরুত্ব: আক্ষরিক অর্থেই, কোল বিদ্রোহ ছিল নিপীড়িত, নির্যাতিত, নিম্নবর্গীয় মানুষের সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ। শেষপর্যন্ত বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে সরকার কোল উপজাতিদের জন্য ‘দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি’ নামে একটি ভূখণ্ড নির্দিষ্ট করে দিতে বাধ্য হয় এবং এই অঞ্চলে কোলদের জন্য কয়েকটি স্বতন্ত্র নিয়ম-কানুন বলবৎ থাকে I
2.কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন?
উত্তর: প্রথমে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে এবং পরে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ইংরেজ সরকার যে দুটি অরণ্য আইন প্রণয়ন করেছিল, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ঔপনিবেশিক স্বার্থ রক্ষা করা ও আধিপত্য সুদৃঢ় করা।
ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর সম্প্রসারণ এবং ভারতে রেলপথ বিস্তারের লক্ষ্যে কাঠের স্লিপার তৈরির জন্য ভারতের বনজ সম্পদের ওপর ঔপনিবেশিক সরকারের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছিল।
ভারতের সুবিস্তৃত বনাঞ্চলের জমিকে পরিষ্কার করে কৃষিযোগ্য করে তোলার উদ্দেশ্য যেমন ছিল, তেমনি আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে ঝুম চাষের পরিবর্তে স্থায়ী কৃষিকাজে অভ্যস্ত করে তোলার তাগিদ ছিল।
ব্রিটিশ সরকারের কর্তাব্যক্তিদের মূল উদ্দেশ্য ছিল কৃষিজমির সম্প্রসারণ ঘটিয়ে রাজস্ব বৃদ্ধি এবং বনজ সম্পদকে বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহার করে আয় ও মুনাফা বৃদ্ধি করা।
এটাও ঠিক যে ব্রিটিশ সরকার ভারতের বনভূমিকে সংরক্ষিত অরণ্য, সুরক্ষিত অরণ্য এবং গ্রামীণ অরণ্য-এই তিনটি ভাগে বিভক্ত করে বন সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে ঔপনিবেশিক স্বার্থ ও মুনাফা বজায় রাখতে গিয়ে অরণ্য আইন প্রয়োগের মাধ্যমে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বাধিকার জীবন-জীবিকার মূলে কুঠারাঘাত করা হয়েছিল এবং যার ফলে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহ।