উত্তর-ঔপ-নিবেশিক ভারত: বিংশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭-১৯৬৪)

উত্তর-ঔপ-নিবেশিক ভারত: বিংশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭-১৯৬৪)

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক
১৯৪৭-পরবর্তী উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ ও বিতর্ক
ভাষার ভিত্তিতে ভারতে রাজ্য পুনর্গঠনের উদ্যোগ ও বিতর্ক

বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ)

1.ভারতের ‘লৌহমানব’ বলা হয়-

( A) মহাত্মা গান্ধি (B) সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল (C) মহম্মদ আলি জিন্নাহ (D) রাজেন্দ্রপ্রসাদ

 Ans. B) সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল 

2.এ ট্রেন টু পাকিস্তান’ লিখেছেন

(A) জওহরলাল নেহরু (B) ভি. পি. মেনন (C) খুশবন্ত সিং (D) সলমন রুশদি

Ans.  (C) খুশবন্ত সিং

3.স্বতন্ত্র ভাষাভিত্তিক অম্মপ্রদেশ গঠিত হয়-

(A) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে (৪) ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে (C) ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে (০) ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে MP 2018 & 2023

Ans. (C) ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে

4.গোয়া ভারতভুক্ত হয়-

(A) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে (৪) ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে (C) ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে (D) ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে 

Ans. (C) ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে

5.যে দেশীয় রাজ্যটি গণভোটের মাধ্যমে ভারতীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়-

(A) কাশ্মীর ( ৪) হায়দ্রাবাদ (C) জুনাগড় (D) জয়পুর 

Ans. (C) জুনাগড়

সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন (SAQ)

1.দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির দলিল বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: ভারতের স্বাধীনতালাভের পরবর্তীকালে বিভিন্ন দেশীয় রাজ্য যে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে ভারত ইউনিয়ানে যোগদান করে, তা ভারতভুক্তির দলিল বা ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন নামে পরিচিত। স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং তাঁর সচিব ভি. পি. মেননের নেতৃত্বে এই চুক্তিপত্র রচিত হয়। এতে বিশাল পরিমাণ ভাতা, খেতাব ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারত ইউনিয়ানে যোগদান করানোর ব্যবস্থা করা হয়।

2.’দেশীয় রাজ্য দফতর’ কেন গঠিত হয়েছিল?/বলতে কী বোঝ?

উত্তর: মাউন্ট ব্যাটেনের প্রস্তাবনায় দেশীয় রাজ্যগুলিকে তাদের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষা অথবা ভারত ও পাকিস্তান যেকোনো একটি ডোমিনিয়ানে যোগদানের স্বাধীনতা দেওয়া হলেও ভারতরাষ্ট্রের পক্ষে এই বিরাট সংখ্যক দেশীয় রাজ্যের স্বাধীন অস্তিত্ব মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। বস্তুতপক্ষে, ভারতরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সুষ্ঠ যোগাযোগ ব্যবস্থা, জাতীয় সংহতি, অর্থনৈতিক বিকাশ প্রভৃতির পক্ষে দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীন অস্তিত্ব অন্তরায় স্বরূপ ছিল। তাই দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির উদ্যোগকে সফল করার জন্য সর্দার বল্লভভাই। প্যাটেলের নেতৃত্বে ‘দেশীয় রাজ্য দফতর’ নামে একটি স্বতন্ত্র দফতর গঠন করা হয়।

3.স্বাধীন ভারতের পক্ষে দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীন অস্তিত্ব মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না কেন?

উত্তর: কষ্টার্জিত স্বাধীনতার পর ভারতরাষ্ট্রের পক্ষে দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীনতা তথা অখণ্ডতা মেনে নেওয়া ছিল যথেষ্ট কষ্টকর। ভারতরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সুষ্ঠ যোগাযোগ ব্যবস্থা, জাতীয় সংহতি, অর্থনৈতিক বিকাশ প্রভৃতির পক্ষে দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীন অস্তিত্ব অন্তরায় স্বরূপ ছিল। তাছাড়া ওই সমস্ত রাজ্যের জনমতও ভারতরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্তির পক্ষে ছিল।

দীর্ঘ উত্তর প্রশ্ন (LAQ)

1.সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো: দেশবিভাগ (১৯৪৭) জনিত উদ্বাস্তু সমস্যা। 

উত্তর :  ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশভাগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতার প্রথম পাঁচ বছরে উদ্‌দ্বাস্তু সমস্যা তীব্র আকার নিয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু উত্তর ও পশ্চিম ভারতে মূলত পাঞ্জাবে আশ্রয় নিয়েছিল। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) থেকে আগত উদ্বাস্তু ও শরণার্থীরা জীবন ও জীবিকার স্বার্থে আশ্রয় নিয়েছিল মূলত এপার বাংলা অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায়। নিরাপত্তাজনিত অভাব, ধর্ম ও সংস্কৃতিগত সাদৃশ্য এবং বাংলা ভাষায় স্বাচ্ছন্দ্যের দরুন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুকে আশ্রয় ও পুনর্বাসন দেওয়া ছিল খুবই কঠিন কাজ। বিপুল জনসংখ্যা, পরিকাঠামোজনিত সমস্যা, কিছুটা কেন্দ্রীয় স্তরের উদাসীন্য উদ্বাস্তু সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল। বিপুল সংখ্যক শরণার্থী প্রাথমিকভাবে আশ্রয় নিয়েছিল স্টেশনে, ফুটপাতে, খোলা আকাশের নীচে এবং বিভিন্ন উদ্বাস্তু ক্যাম্পে। পরে অবশ্য ছিন্নমূল এই সমস্ত মানুষজন নিজ উদ্যোগে কলোনী গড়ে তোলে আবার কোথাও বা সরকারি সাহায্যে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। উদ্‌দ্বাস্তু মানুষের অসহায়তা, জীবনযন্ত্রণা, ভয়াবহ স্মৃতি এবং পূর্বতন গ্রাম বা শহরের মধুর স্মৃতি ধরা পড়েছে তাদের আত্মকথা, স্মৃতিকথা এবং সমসাময়িক সাহিত্যে। এই দেশভাগ, দাঙ্গা এবং অভিপ্রয়াণের জ্বলন্ত সাক্ষী ছিলেন যেসব নারীরা তারাও তাদের ভয়াবহ স্মৃতি, যন্ত্রণা, সর্বোপরি সংগ্রামকে কাগজে কলমে বা আলাপচারিতায় তুলে ধরেছেন।

2.আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় কীভাবে দেশভাগের স্মৃতি বর্ণিত হয়েছে?

উত্তর : দেশভাগের অপরিসীম দুঃখ-দুর্দশা, যন্ত্রণা, ছন্নছাড়া জীবন, বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় গ্রহণ ও পুনর্বাসন প্রভৃতি সমকালীন অনেক বিদগ্ধ মানুষের আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় স্থান পেয়েছে।তৎকালীন উদ্বাস্তু কমিশনার হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘উদ্বাস্তু’, প্রফুল্ল কুমার চক্রবর্তীর ‘দ্য মার্জিনাল মেন’ (প্রান্তিক মানব), শঙ্খ ঘোষের ‘সুপুরি বনের সারি’, প্রফুল্ল রায়ের ‘কেয়া পাতার নৌকা’, দক্ষিণারঞ্জন বসুর ‘ছেড়ে আসা গ্রাম’, মনিকুন্তলা সেনের ‘সেদিনের কথা’, নিরোধচন্দ্র চৌধুরির ‘অটোবায়োগ্রাফি অফ অ্যান আননোন ইন্ডিয়ান’ প্রভৃতি আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা বা উপন্যাসে দেশভাগের যন্ত্রণার করুণসুর ধ্বনিত হয়েছে।

দেশভাগের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কীভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, নারী নির্যাতন, লুণ্ঠন প্রভৃতির শিকার হয়েছে এবং দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে-তা বিভিন্ন সমকালীন সাহিত্যে যথার্থই ফুটে উঠেছে। দেশত্যাগ কীভাবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার-পরিজনের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে, তার বাস্তব মর্মস্পর্শী চিত্র ফুটে উঠেছে বিভিন্ন স্মৃতিকথায়। কবি শঙ্খ ঘোষ লিখেছেন-“আমার মুখে অন্তহীন আত্মলাঞ্ছনার ক্ষত/আমার বুকে পালানোর, পালানোর আরো পালানোর দেশজোড়া স্মৃতি।”

বাস্তবিকই, দেশভাগ আধুনিক ভারত ইতিহাসের সবচেয়ে বিপর্যয়কারী ঘটনা। এত বড়ো গণপ্রস্থানের উদাহরণ বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। সেই অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশার যে যৎসামান্য অংশ লিখিত আকারে আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা রূপে আমাদের কাছে প্রকাশিত হয়েছে-তা সত্যই বেদনাদায়ক।

Scroll to Top