বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক বিশ্লেষণ জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক বিশ্লেষণ জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

বিশ শতকের ভারতে নারী আন্দোলনের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

বিশ শতকের ভারতে ছাত্র আন্দোলনের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

বিশ শতকের ভারতে দলিত রাজনীতি ও আন্দোলনের বিকাশ: চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ)
1.বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল
(A) ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে (B) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে (৫) ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে (D) ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে
Ans. (B) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে
2.মাতঙ্গিনী হাজরা ভারত ছাড়ো আন্দোলনে (১৯৪২) অংশগ্রহণ করেছিলেন যে স্থানে-
(A) তমলুক (B) সুতাহাটা (c) বরিশাল (D) পুরুলিয়া
Ans. (A) তমলুক
3.দীপালি সংঘ (১৯২৩) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন-
(A) কল্পনা দত্ত (B) লীলা নাগ (রায়) (C) বাসন্তী দেবী (D) বীণা দাস
Ans. (B) লীলা নাগ (রায়)
4.’নারী কর্ম মন্দির’ (১৯২১) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন
(A) উর্মিলা দেবী (B) বাসন্তী দেবী (c) কল্পনা দত্ত (D) লীলা নাগ (রায়)
Ans.(A) উর্মিলা দেবী
5 . সূর্য সেন প্রতিষ্ঠিত বিপ্লবীদলের নাম ছিল-
(A) অনুশীলন সমিতি (B) গদর দল (C) ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি (D) বেলাল ভলান্টিয়ার্স
Ans. (C) ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন (SAQ)
1.রশিদ আলি দিবস কেন পালিত হয়েছিল?
উত্তর:দিল্লির সামরিক আদালত আজাদ হিন্দ ফৌজের ক্যাপ্টেন রশিদ আলিকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করলে তার মুক্তির দাবিতে মুসলিম লিগের ছাত্র সংগঠন ১৯৪৬ এর ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়। সেদিন দুপুরে ছাত্ররা মিছিল করে ডালহৌসি স্কোয়ারের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ ছাত্র মিছিলের উপর গুলি চালায়। এর প্রতিবাদে পরদিন অর্থাৎ ১২ ফেব্রুয়ারি রশিদ আলি দিবস পালনের ডাক দেওয়া হয়। এইভাবে রশিদ আলির বিচারকে কেন্দ্র করে ১১-১৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতা গণ আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে।
2.প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার স্মরণীয় কেন?
উত্তর:বাংলাদেশের বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এক উল্লেখযোগ্য নাম। ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি-র চট্টগ্রাম শাখার সদস্যা এই দুঃসাহসী তরুণী ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পাহাড়তলির ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে সফল নেতৃত্ব দেন। ধরা পড়ার অসম্মান থেকে বাঁচতে তিনি বিষপান করে শহিদের মৃত্যু বরণ করেন।
3.মাস্টারদা সূর্য সেন বিখ্যাত কেন?
উত্তর: বিপ্লবী সূর্য সেন পূর্ববাংলার চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাঁর নেতৃত্বে একদল দুঃসাহসী তরুণ বিপ্লবী ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করেন এবং জালালাবাদ পাহাড়ে ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। পরে তিনি ধরা পড়েন এবং ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়। পেশায় স্কুল শিক্ষক ছিলেন বলে তিনি ‘মাস্টারদা’ নামে সমধিক পরিচিত। স্বাধীনতা আন্দোলনের শহিদ হিসাবে তিনি আমাদের কাছে স্মরণীয়।
দীর্ঘ উত্তর প্রশ্ন (LAQ)
1.দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক নিয়ে একটি টীকা লেখো।
উত্তর: দলিত মতাদর্শ ও অধিকার নিয়ে ভারতের জাতীয় আন্দোলনের প্রাণপুরুষ গান্ধিজি
এবং দলিত আন্দোলনের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা ড. বি. আর, আম্বেদকরের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
দলিত অধিকার বিষয়ে গান্ধি-জ্যাম্বদকর বিতর্ক:
প্রথমত, আম্বেদকর বিশ্বাস করতেন যে হিন্দু সমাজে প্রচলিত বর্ণাশ্রম প্রথাই দলিত সমাজের উপর সকল অনাচার ও অস্পৃশ্যতার কারণ। অপরপক্ষে গান্ধিজি ছিলেন বর্ণাশ্রম প্রথার সমর্থক কিন্তু অস্পৃশ্যতার প্রবল বিরোধী। বর্ণাশ্রম ব্যবস্থাকে অক্ষুন্ন রেখেই তিনি অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ ও দলিত সম্প্রদায়ের কল্যাণে মনোনিবেশ করেন। এইভাবে বর্ণাশ্রম প্রথার সমর্থন ও অসমর্থনের প্রশ্নে এই দুই ব্যক্তিত্বের মধ্যে বিতর্ক দানা বাঁধে।
দ্বিতীয়ত, গান্ধিজি চেয়েছিলেন জাতীয়তার ভিত্তিতে সমস্ত শ্রেণিগুলির মধ্যে সমন্বয় ও ঐক্য স্থাপন। কিন্তু আম্বেদকর বলেছিলেন তা সম্ভব নয়। কেননা, ব্রাহ্মণদের শোষণে দলিতরা ইতিমধ্যেই অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় রয়েছে।
তৃতীয়ত, গান্ধিজি জোর দিয়েছিলেন সামগ্রিকভাবে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উপর। স্পর্শকাতর বিষয়গুলি জাতীয় আন্দোলনকে দুর্বল করুক, তা তিনি চাননি।আম্বেদকরের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ভিন্ন। তিনি বলেছিলেন, জাতীয়তাবাদ সঠিকভাবে তখনই
সঞ্চারিত হবে যখন দলিতদের উপযুক্ত মর্যাদা দিয়ে সমাজের মূল স্রোতে গ্রহণ করা হবে। তাদের সমানাধিকার দেওয়াটি ভীষণ প্রয়োজনীয় বলে আম্বেদকর অভিমত দিয়েছেন।
চতুর্থত, গান্ধিজি ভারতের অতীত ইতিহাসকে উজ্জ্বলভাবে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আম্বেদকর বলেছিলেন এর মধ্যে বহু কলঙ্কজনক অধ্যায় রয়েছে। যেমন, দলিতদের যুগযুগান্তর ধরে নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা।
পঞ্চমত: অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ, দলিতদের উন্নতি প্রভৃতি গান্ধিজি দেখেছিলেন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে।
অন্যদিকে আম্বেদকর আর্থ-সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে দলিত সমস্যার বিচার করেছিলেন।
2.সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে দীপালি সংঘ কিরুপ ভূমিকা পালন করেছিল?
উত্তর:সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীসমাজের যোগদান প্রসঙ্গে ‘দীপালি সংঘ’-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
প্রতিষ্ঠা:বিপ্লবী দেশনেত্রী লীলা নাগ (রায়) ১৯২৩ সালে ঢাকায় দীপালি সংঘের প্রতিষ্ঠা করেন।
উদ্দেশ্য:নারী জাগরণ, নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠা সর্বোপরি সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারী সমাজকে শামিল করাই এই সংঘের মূল উদ্দেশ্য ছিল।
কর্মধারা: স্ত্রী শিক্ষার প্রসার: দীপালি সংঘ’-এর তরফে পাড়ায় পাড়ায় স্টাডি সার্কেল গড়ে তোলা হয়। এই কার্যক্রমে ধারাবাহিকভাবে অনেক স্কুল প্রতিষ্ঠা, শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন, বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র প্রভৃতি গড়ে ওঠে।
সশস্ত্র বিপ্লববাদের দীক্ষা: মহিলাদের সাহস ও শক্তিবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে দীপালি সংঘের তরফে লাঠি খেলা, শরীর চর্চা, অস্ত্র চালনা প্রভৃতির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বীরাঙ্গনা প্রীতিলতা প্রথম জীবনে এখানেই অস্ত্রচালনার পাঠ নেন।
দীপালি প্রদর্শনী:দীপালি সংঘের উদ্যোগে ১৯২৪ সাল থেকে শুরু হয় ‘দীপালি প্রদর্শনী’। মেয়েদের তৈরি দ্রব্যসামগ্রী এখানে বিক্রি করে তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
দীপালি ছাত্র সংঘ:১৯২৬ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় দীপালি ছাত্র সংঘ। উল্লেখ্য, এটাই ছিল বাংলা তথা ভারতের প্রথম ছাত্রী সংগঠন। রেনুকা সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, বীণাপাণি রায় প্রমুখ ছিলেন এর উল্লেখযোগ্য সদস্যা।
দীপালি ছাত্রী ভবন:১৯৩০ সালে দীপালি সংঘের উদ্যোগে কলকাতায় স্থাপিত হয়। দীপালি ছাত্রীভবন-মহিলাকর্মী ও ছাত্রীদের বাসস্থান। পরে এটি নারী বিপ্লবীদের অন্যতম মিলন কেন্দ্রে পরিণত হয়।
পত্রিকা প্রকাশ:দীপালি সংঘের তরফে ১৯৩১ সাল থেকে লীলা সভা Suggestions নাগের সম্পাদনায় একটি পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে। এই পত্রিকা বিপ্লববাদের প্রসারের পাশাপাশি নারী জাতির সার্বিক বিকাশ ও নারী শিক্ষার সপক্ষে প্রচার চালায়। কবিগুরুর প্রেরণায় লীলা নাগ এই পত্রিকার নামকরণ করেন ‘জয়শ্রী’।
মন্তব্য দীপালি সংঘের পতাকা তলে দলে দলে নারীরা সমবেত হয়। তাদের সাহসী সংগ্রামে বাংলার আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়েছে বহুকাল।