বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ

বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ

বংশগতির সাথে সম্পর্কিত মূল শব্দাবলী
মেন্ডেলের পরীক্ষা ও মেন্ডেলের সূত্র: মটর গাছের উপর মনোহাইব্রিড ক্রস
মেন্ডেলের পরীক্ষা এবং মেন্ডেলের সূত্র: গিনি পিগে মনোহাইব্রিড ক্রস
মেন্ডেলের পরীক্ষা ও মেন্ডেলের সূত্র: মটর গাছের ডাইহাইব্রিড সংকরায়ন
মেন্ডেলের পরীক্ষা ও মেন্ডেলের সূত্র: গিনিপিগে ডাইহাইব্রিড ক্রস
মেন্ডেলের বংশগতির নিয়মের ব্যতিক্রম
মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ প্রক্রিয়া এবং পিতার ভূমিকা
কিছু সাধারণ জিনগত রোগ

Multiple Choice Questions (MCQ)

১. কাকে “জিনতত্ত্বের জনক” বলা হয়?
(ক) চার্লস ডারউইন
(খ) গ্রেগর মেন্ডেল
(গ) জেমস ওয়াটসন
(ঘ) ফ্রান্সিস ক্রিক
উত্তর: (খ) গ্রেগর মেন্ডেল

২. একটি জিনের বিভিন্ন রূপগুলিকে কী বলা হয়?
(ক) জিনোটাইপ
(খ) ফেনোটাইপ
(গ) অ্যালিল
(ঘ) ক্রোমোজোম
উত্তর: (গ) অ্যালিল

৩. নিম্নলিখিত কোনটি একটি অটোজোমাল প্রচ্ছন্ন জিনগত রোগ?
(ক) হিমোফিলিয়া
(খ) বর্ণান্ধতা
(গ) সিকেল-সেল অ্যানিমিয়া
(ঘ) ডাউন সিনড্রোম
উত্তর: (গ) সিকেল-সেল অ্যানিমিয়া

৪. একটি জীবের বাহ্যিক দৃশ্যমান বৈশিষ্ট্যগুলিকে কী বলা হয়?
(ক) জিনোটাইপ
(খ) ফেনোটাইপ
(গ) জিনোম
(ঘ) ক্যারিওটাইপ
উত্তর: (খ) ফেনোটাইপ

৫. বংশগতির কোন ধরণে একটি জিনের উভয় অ্যালিল ফেনোটাইপে সমানভাবে প্রকাশ পায়?
(ক) সম্পূর্ণ প্রকটতা
(খ) অসম্পূর্ণ প্রকটতা
(গ) সহ-প্রকটতা
(ঘ) প্রচ্ছন্ন বংশগতি
উত্তর: (গ) সহ-প্রকটতা

Short Answer Questions (SAQ)

১. মেন্ডেলের পৃথকীকরণ সূত্রটি বিবৃত করুন।
উত্তর: মেন্ডেলের পৃথকীকরণ সূত্র অনুসারে, গ্যামেট তৈরির সময়, প্রতিটি জিনের দুটি অ্যালিল পৃথক হয়ে যায় যাতে প্রতিটি গ্যামেটে প্রতিটি জিনের জন্য কেবল একটি অ্যালিল থাকে।

২. জিনতত্ত্বে বংশানুক্রম তালিকা (পেডিগ্রি চার্ট) কীসের জন্য ব্যবহৃত হয়?
উত্তর: বংশানুক্রম তালিকা হল একটি চিত্র যা একটি পরিবারের বিভিন্ন প্রজন্মের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বা জিনগত রোগের উত্তরাধিকার দেখায়। এটি জিনতাত্ত্বিকদের উত্তরাধিকারের ধরণ ট্র্যাক করতে এবং ভবিষ্যতের প্রজন্মে বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশের সম্ভাবনা অনুমান করতে সহায়তা করে।

৩. মানুষের দুটি সাধারণ লিঙ্গ-সংযুক্ত জিনগত রোগের নাম বলুন।
উত্তর: মানুষের দুটি সাধারণ লিঙ্গ-সংযুক্ত জিনগত রোগ হল: হিমোফিলিয়া, বর্ণান্ধতা।

Long Answer Questions (LAQ)

১. উপযুক্ত উদাহরণ সহ মেন্ডেলের প্রকটতার সূত্র এবং স্বাধীনভাবে বিন্যস্ত হওয়ার সূত্র ব্যাখ্যা করুন। এই সূত্রগুলি বংশগতি সম্পর্কে আমাদের ধারণা গঠনে কীভাবে অবদান রাখে?

উত্তর:

  • মেন্ডেলের প্রকটতার সূত্র: এই সূত্র অনুসারে, যখন বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত দুটি বিশুদ্ধ জীবের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটানো হয়, তখন প্রথম অপত্য বংশে (F1) কেবল প্রকট বৈশিষ্ট্যটিই প্রকাশ পায় এবং প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যটি সুপ্ত থাকে। দ্বিতীয় অপত্য বংশে (F2) উভয় বৈশিষ্ট্যই একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে (একসংকর জননে ৩:১) পুনরায় প্রকাশিত হয়।

    উদাহরণ: বিশুদ্ধ লম্বা (TT) ও বিশুদ্ধ বেঁটে (tt) মটর গাছের মধ্যে সংকরায়ণ করলে F1 জনুতে সকল গাছ লম্বা (Tt) হয়। এখানে লম্বা বৈশিষ্ট্য (T) বেঁটে বৈশিষ্ট্যের (t) উপর প্রকট। F1 জনুর গাছগুলির মধ্যে স্ব-নিষেক ঘটানো হলে F2 জনুতে লম্বা ও বেঁটে গাছ ৩:১ অনুপাতে (TT, Tt, tt) পাওয়া যায়।

  • মেন্ডেলের স্বাধীনভাবে বিন্যস্ত হওয়ার সূত্র: এই সূত্র অনুসারে, দুই বা ততোধিক জোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীবের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটালে, প্রতিটি জোড়া অ্যালিল গ্যামেট গঠনকালে একে অপরের থেকে স্বাধীনভাবে বিন্যস্ত হয়। অর্থাৎ, একটি বৈশিষ্ট্যের অ্যালিলের বিন্যাস অন্য বৈশিষ্ট্যের অ্যালিলের বিন্যাসকে প্রভাবিত করে না, যদি জিন দুটি ভিন্ন ক্রোমোজোমে অবস্থিত থাকে।

    উদাহরণ: বিশুদ্ধ গোল হলুদ (RRYY) ও বিশুদ্ধ কুঁচকানো সবুজ (rryy) মটর গাছের মধ্যে সংকরায়ণে F1 জনুতে উৎপন্ন সকল গাছ গোল হলুদ (RrYy) হয়। F1 জনুর গাছগুলি গ্যামেট তৈরির সময় বীজের আকার (R, r) ও বীজের রঙ (Y, y) এর অ্যালিলগুলি একে অপরের থেকে স্বাধীনভাবে বিন্যস্ত হয়ে চারটি ভিন্ন প্রকার গ্যামেট (RY, Ry, rY, ry) সমান অনুপাতে তৈরি করে। এদের মধ্যে মিলন ঘটলে F2 জনুতে চার প্রকার ফিনোটাইপ ৯:৩:৩:১ অনুপাতে (গোল হলুদ : গোল সবুজ : কুঁচকানো হলুদ : কুঁচকানো সবুজ) দেখা যায়।

বংশগতি সম্পর্কে ধারণা গঠনে অবদান: মেন্ডেলের এই সূত্র দুটি বংশগতির মূল ভিত্তি স্থাপন করেছে। প্রকটতার সূত্র ব্যাখ্যা করে কেন কিছু বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয় এবং কিছু সুপ্ত থাকে। পৃথকীকরণ সূত্র গ্যামেট গঠনের সময় অ্যালিলগুলির পৃথক হওয়ার নিয়ম ব্যাখ্যা করে। স্বাধীনভাবে বিন্যস্ত হওয়ার সূত্র একাধিক বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকার এবং বংশধরে নতুন বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ের সম্ভাবনা ব্যাখ্যা করে, যা জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধিতে সহায়ক। এই সূত্রগুলি জিনতত্ত্বের বিকাশে এবং পিতামাতা থেকে সন্তানে বৈশিষ্ট্য স্থানান্তরের প্রক্রিয়া বুঝতে অপরিহার্য।

 

২. মানুষের দুটি সাধারণ জিনগত রোগের কারণ, লক্ষণ এবং উত্তরাধিকারের ধরণ বর্ণনা করুন। এই রোগগুলির ব্যবস্থাপনায় জিনগত কাউন্সেলিংয়ের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করুন।

উত্তর:

  • সিকেল সেল অ্যানিমিয়া(Sickle-cell anemia):

    • কারণ: এটি একটি অটোজোমাল প্রচ্ছন্ন রোগ। হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য দায়ী জিনে ত্রুটির কারণে এই রোগ হয়। ত্রুটিপূর্ণ জিন হোমোজাইগাস অবস্থায় থাকলে লোহিত রক্ত কণিকা কাস্তের আকার ধারণ করে।
    • লক্ষণ: রক্তাল্পতা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, হাড় ও জয়েন্টে তীব্র ব্যথা (সিকল সেল ক্রাইসিস), সংক্রমণ প্রবণতা বৃদ্ধি, প্লীহা ও অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি।
    • উত্তরাধিকারের ধরণ: এটি প্রচ্ছন্ন জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বাবা ও মা উভয়েই রোগের বাহক হলে সন্তানের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ২৫%, বাহক হওয়ার সম্ভাবনা ৫০% এবং সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ২৫%।
  • হিমোফিলিয়া:

    • কারণ: এটি একটি লিঙ্গ-সংযুক্ত প্রচ্ছন্ন রোগ (X-linked recessive)। রক্ত জমাট বাঁধার জন্য প্রয়োজনীয় ফ্যাক্টর VIII (হিমোফিলিয়া A) বা ফ্যাক্টর IX (হিমোফিলিয়া B) এর অভাবের কারণে এই রোগ হয়। এই জিন X ক্রোমোজোমে অবস্থিত।
    • লক্ষণ: সামান্য আঘাতেও দীর্ঘক্ষণ রক্তপাত, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ, জয়েন্টে রক্তক্ষরণ, যা বিকলাঙ্গতা সৃষ্টি করতে পারে।
    • উত্তরাধিকারের ধরণ: পুরুষদের একটি X ক্রোমোজোম থাকায় ত্রুটিপূর্ণ জিন এলেই রোগ প্রকাশ পায়। মহিলারা দুটি X ক্রোমোজোমের একটিতে ত্রুটিপূর্ণ জিন বহন করলে সাধারণত রোগের লক্ষণ দেখান না (বাহক), তবে তাদের পুত্র সন্তানদের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

জিনগত কাউন্সেলিংয়ের গুরুত্ব: জিনগত কাউন্সেলিং এই ধরনের জিনগত রোগ ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:

  • ঝুঁকি নির্ধারণ: পারিবারিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করে রোগের ঝুঁকি মূল্যায়ন করা।
  • রোগ নির্ণয়: জিনগত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ এবং বাহক সনাক্ত করা।
  • তথ্য প্রদান: রোগের কারণ, লক্ষণ, উত্তরাধিকারের ধরণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া।
  • মানসিক সমর্থন: আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারকে মানসিক ও সামাজিক সমর্থন প্রদান করা।
  • প্রজনন পরিকল্পনা: ঝুঁকিপূর্ণ দম্পতিদের প্রজনন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করা (যেমন, প্রসবপূর্ব রোগ নির্ণয়)।
  • চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা: রোগের সঠিক চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করা।

জিনগত কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবার রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং সঠিক পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়।

 

Scroll to Top