পরিবেশ,তার সম্পদ

পরিবেশ,তার সম্পদ

নাইট্রোজেন চক্র: সংজ্ঞা ও বিভিন্ন পর্যায়

নাইট্রোজেন চক্র: অ্যামোনিফিকেশন, নাইট্রিফিকেশন এবং ডিনাইট্রিফিকেশন

বায়ুদূষণ: কারণ ও প্রভাব

পরিবেশ দূষণ: জল দূষণের কারণ ও প্রভাব

পরিবেশ দূষণ: মাটির দূষণের কারণ ও প্রভাব

পরিবেশ দূষণ – শব্দ দূষণের কারণ এবং প্রভাব

পরিবেশ ও মানব জনসংখ্যা: জনসংখ্যা, জনসংখ্যার ঘনত্ব, জন্মহার, মৃত্যুহার ও লিঙ্গ অনুপাত

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং পরিবেশের উপর এর প্রভাব

পরিবেশ ও মানব জনসংখ্যা: স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব

জীববৈচিত্র্য ও তার সংরক্ষণ: ধারণা, সংজ্ঞা ও গুরুত্ব

জীববৈচিত্র্য ও তার সংরক্ষণ: ভারতের জীববৈচিত্র্য হটস্পটসমূহ

বৈচিত্র্যতা এবং তার সংরক্ষণ: জীববৈচিত্র্য হ্রাস ও তার কারণ

জীববৈচিত্র্য এবং তার সংরক্ষণ: সুন্দরবনের পরিবেশগত সমস্যা

জীববৈচিত্র্য ও তার সংরক্ষণ: ইন-সিটু সংরক্ষণের উদাহরণ ও বৈশিষ্ট্য

জীববৈচিত্র্য এবং এর সংরক্ষণ: এক্স-সিটু সংরক্ষণের (Ex Situ Conservation) উদাহরণ ও বৈশিষ্ট্য

জীববৈচিত্র্য ও এর সংরক্ষণ: জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে JMF এবং PBR-এর ভূমিকা

জীববৈচিত্র্য এবং তার সংরক্ষণ: ভারতে কিছু বিপন্ন প্রজাতি ও তাদের সংরক্ষণ
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ)
১. নিম্নলিখিত কোনটি নাইট্রোজেন চক্রে নাইট্রোজেনের প্রাথমিক ভাণ্ডার?
(ক) মাটি
(খ) বায়ুমণ্ডল
(গ) জলাশয়
(ঘ) জীবন্ত জীব
উত্তর:(খ) বায়ুমণ্ডল
২. নিম্নলিখিত কোনটি জল দূষণের একটি প্রধান কারণ?
(ক) বৃক্ষরোপণ
(খ) মৃত্তিকা ক্ষয়
(গ) শিল্প বর্জ্য নিঃসরণ
(ঘ) নবায়ানবযোগ্য শক্তির ব্যবহার
উত্তর:(গ) শিল্প বর্জ্য নিঃসরণ
৩. মানব জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে কী হতে পারে?
(ক) সম্পদ ব্যবহার হ্রাস
(খ) প্রাকৃতিক সম্পদের উপর বর্ধিত চাপ
(গ) উন্নত পরিবেশগত গুণমান
(ঘ) বর্ধিত জীববৈচিত্র্য
উত্তর:(খ) প্রাকৃতিক সম্পদের উপর বর্ধিত চাপ
৪. জৈবিক সংগঠনের সকল স্তরে জীবনের বিভিন্ন রূপের বৈচিত্র্যকে কী বলা হয়?
(ক) বাস্তুতন্ত্র
(খ) আবাসস্থল
(গ) জীববৈচিত্র্য
(ঘ) বাস্তুসংস্থানিক কুলুঙ্গি
উত্তর:(গ) জীববৈচিত্র্য
৫. ইন-সিটু সংরক্ষণ বলতে বোঝায়:
(ক) কৃত্রিম আবাসস্থলে প্রজাতির সংরক্ষণ
(খ) তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থলে প্রজাতির সংরক্ষণ
(গ) চিড়িয়াখানায় বিপন্ন প্রজাতির সংগ্রহ
(ঘ) জিন ব্যাংকে জেনেটিক উপাদানের সংরক্ষণ
উত্তর:(খ) তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থলে প্রজাতির সংরক্ষণ
সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন (SAQ)
১. নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ প্রক্রিয়াটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করুন।
উত্তর:নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ হল সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলীয় নাইট্রোজেন (N₂) অ্যামোনিয়া (NH₃) বা অন্যান্য নাইট্রোজেনযুক্ত যৌগে রূপান্তরিত হয় যা উদ্ভিদ ব্যবহার করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি মূলত মাটিতে বসবাসকারী কিছু মুক্তজীবী এবং মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া এবং বজ্রপাতের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
২. পরিবেশ দূষণের তিনটি প্রধান প্রকার তালিকাভুক্ত করুন।
উত্তর:পরিবেশ দূষণের তিনটি প্রধান প্রকার হল:
* বায়ু দূষণ
* জল দূষণ
* মাটি দূষণ
৩. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দুটি প্রধান পদ্ধতি কী কী?
উত্তর:জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দুটি প্রধান পদ্ধতি হল:
* ইন-সিটু সংরক্ষণ (প্রাকৃতিক আবাসস্থলের অভ্যন্তরে সংরক্ষণ)
* এক্স-সিটু সংরক্ষণ (প্রাকৃতিক আবাসস্থলের বাইরে সংরক্ষণ)
দীর্ঘ উত্তর প্রশ্ন (LAQ)
১. নাইট্রোজেন চক্রের বিভিন্ন ধাপ বর্ণনা করুন। পৃথিবীতে জীবন বজায় রাখার জন্য এই চক্রের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করুন।
উত্তর:নাইট্রোজেন চক্র হল একটি বায়োজিওকেমিক্যাল প্রক্রিয়া যা বায়ুমণ্ডলের নিষ্ক্রিয় নাইট্রোজেনকে জীবজগতের ব্যবহারের উপযোগী বিভিন্ন যৌগে রূপান্তরিত করে এবং পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ফিরিয়ে আনে। এই চক্রের প্রধান ধাপগুলি হল:
- নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ (Nitrogen Fixation):বায়ুমণ্ডলীয় নাইট্রোজেন (N₂) কে অ্যামোনিয়া (NH₃) বা অ্যামোনিয়াম আয়নে (NH₄⁺) রূপান্তরিত করা হয়। এটি তিনটি উপায়ে ঘটতে পারে:
- জৈবিক স্থিতিকরণ:কিছু মুক্তজীবী ব্যাকটেরিয়া (যেমন অ্যাজোটোব্যাক্টর) এবং মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া (যেমন লেগুমিনাস উদ্ভিদের মূলে রাইজোবিয়াম) বায়ুমণ্ডলীয় নাইট্রোজেনকে অ্যামোনিয়ায় রূপান্তরিত করে।
- ভৌত স্থিতিকরণ:বজ্রপাতের সময় উচ্চ তাপমাত্রায় বায়ুর নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন বিক্রিয়া করে নাইট্রোজেন অক্সাইড তৈরি করে, যা বৃষ্টির জলের সাথে মিশে মাটিতে নাইট্রেট রূপে আসে।
- শিল্প স্থিতিকরণ:কারখানায় উচ্চ চাপ ও তাপমাত্রায় হাইড্রোজেন ও নাইট্রোজেনের বিক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যামোনিয়া তৈরি করা হয়।
- নাইট্রিফিকেশন (Nitrification):মাটিতে বসবাসকারী কিছু বিশেষ ব্যাকটেরিয়া (যেমন নাইট্রোসোমোনাস ও নাইট্রোব্যাক্টর) অ্যামোনিয়াকে প্রথমে নাইট্রাইট (NO₂⁻) এবং পরে নাইট্রেট (NO₃⁻) এ রূপান্তরিত করে। নাইট্রেট উদ্ভিদের দ্বারা সহজেই শোষিত হতে পারে।
- আত্তীকরণ (Assimilation):উদ্ভিদ মাটি থেকে নাইট্রেট ও অ্যামোনিয়াম আয়ন শোষণ করে এবং সেগুলিকে প্রোটিন, নিউক্লিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য জৈব অণুতে ব্যবহার করে। প্রাণীরা যখন উদ্ভিদ খায়, তখন তারা এই নাইট্রোজেন যৌগগুলি গ্রহণ করে।
- অ্যামোনিফিকেশন (Ammonification):মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং প্রাণীদের বর্জ্য পদার্থ মাটিতে মেশার পর কিছু জীবাণু (যেমন ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক) সেগুলিকে ভেঙে অ্যামোনিয়া বা অ্যামোনিয়াম আয়নে পরিণত করে।
- ডিনাইট্রিফিকেশন (Denitrification):কিছু বিশেষ ব্যাকটেরিয়া (যেমন সিউডোমোনাস) মাটিতে অক্সিজেনের অভাব হলে নাইট্রেটকে ভেঙে গ্যাসীয় নাইট্রোজেন (N₂) বা নাইট্রাস অক্সাইডে (N₂O) পরিণত করে বায়ুমণ্ডলে ফিরিয়ে দেয়।
পৃথিবীতে জীবন বজায় রাখার জন্য এই চক্রের গুরুত্ব:
নাইট্রোজেন চক্র পৃথিবীর জীবজগতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ:
- নাইট্রোজেন প্রোটিন, নিউক্লিক অ্যাসিড (DNA ও RNA) এবং ক্লোরোফিলের মতো অত্যাবশ্যকীয় জৈব অণুর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই অণুগুলি জীবনের মৌলিক গঠন ও কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে।
- উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য নাইট্রোজেন একটি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান। মাটির উর্বরতা এবং উদ্ভিদের উৎপাদনশীলতা সরাসরি নাইট্রোজেনের প্রাপ্যতার উপর নির্ভরশীল।
- নাইট্রোজেন চক্র বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। বিভিন্ন রূপে নাইট্রোজেনের বাস্তুতন্ত্রের কার্যকারিতা ও স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করে।
- বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন গ্যাসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে এই চক্রের ভূমিকা আছে। যদিও N₂ একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস, N₂O একটি গ্রিনহাউস গ্যাস যা জলবায়ু পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
- নাইট্রোজেন চক্র অন্যান্য পুষ্টি চক্রের (যেমন কার্বন ও ফসফরাস চক্র) সাথেও সম্পর্কযুক্ত এবং জীবমণ্ডলে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের সহজলভ্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
সুতরাং, নাইট্রোজেন চক্র ব্যাহত হলে জীবজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে।
২.পরিবেশ দূষণের কারণ ও পরিণতি আলোচনা করুন। দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু ব্যবস্থা প্রস্তাব করুন।
উত্তর:পরিবেশ দূষণ বলতে বায়ু, জল ও মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যের অবাঞ্ছিত পরিবর্তনকে বোঝায়, যা জীব ও পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
পরিবেশ দূষণের কারণ:
- শিল্প কার্যকলাপ:কলকারখানা ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত ধোঁয়া, গ্যাস ও বর্জ্য পদার্থ বায়ু, জল ও মাটি দূষিত করে।
- কৃষি কার্যকলাপ:রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং প্রাণীর বর্জ্য জল ও মাটি দূষণের কারণ হয়।
- গৃহস্থালীর বর্জ্য:পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্যের যত্রতত্র নিক্ষেপ মাটি ও জল দূষিত করে।
- পরিবহন:যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া ও গ্যাস বায়ু দূষণের প্রধান কারণ। জাহাজ থেকে তেল নিঃসরণ জল দূষণ ঘটায়।
- জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও নগরায়ন:অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে বর্জ্য উৎপাদন বাড়ে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর চাপ সৃষ্টি হয়, যা দূষণ বাড়ায়।
- বনভূমি ধ্বংস:গাছপালা কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে বায়ু পরিষ্কার রাখে। বনভূমি ধ্বংসের ফলে বায়ু দূষণ বাড়ে এবং মাটি ক্ষয় হয়।
- খনন ও খনিজ উত্তোলন:খনি থেকে নির্গত বিষাক্ত পদার্থ ও ধুলো বায়ু, জল ও মাটি দূষিত করে।
পরিবেশ দূষণের পরিণতি:
- মানব স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব:বায়ু দূষণের ফলে শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ ও ক্যান্সার হতে পারে। জল দূষণের ফলে কলেরা, টাইফয়েড, ডায়রিয়ার মতো জলবাহিত রোগ ছড়ায়। মাটি দূষণের ফলে খাদ্য শস্য বিষাক্ত হতে পারে। শব্দ দূষণ শ্রবণশক্তি হ্রাস ও মানসিক চাপের কারণ হয়।
- বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি:দূষণের ফলে খাদ্য শৃঙ্খল ভেঙে যায়, জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায় এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হয়। অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে বনভূমি ও জলাশয়ের জীব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলাশয়ে অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদানের কারণে ইউট্রোফিকেশন ঘটে এবং জলজ প্রাণীর মৃত্যু হয়।
- জলবায়ু পরিবর্তন:গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমনের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে, যার ফলে ঝড়, বন্যা, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে।
- সম্পদ হ্রাস:দূষণের ফলে ব্যবহারযোগ্য জল ও মাটির পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
- অর্থনৈতিক ক্ষতি:দূষণের কারণে কৃষিজ উৎপাদন কমে যায়, পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বাড়ে।
দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু ব্যবস্থা:
- বর্জ্য উৎপাদন কমানো, পুনর্ব্যবহার করা ও পুনঃব্যবহার করা।
- বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপদ নিষ্কাশন করা।
- শিল্প কারখানার বর্জ্য পরিশোধন করে নদীতে ফেলা এবং ধোঁয়া নির্গমনের পরিমাণ কমানোর জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া।
- কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমানো এবং জৈব সার ব্যবহার করা।
- পরিবহনের জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে গণপরিবহন ব্যবহার করা এবং পরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবহার করা।
- বেশি করে গাছ লাগানো ও বনভূমি রক্ষা করা।
- জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া।
- পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত কঠোর আইন তৈরি ও প্রয়োগ করা।
- দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা।
- আন্তর্জাতিক স্তরে পরিবেশ রক্ষার জন্য সহযোগিতা করা।
এই ব্যবস্থাগুলি সম্মিলিতভাবে গ্রহণ করলে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং একটি সুস্থ ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলা যেতে পারে।