বিকল্প ধারণা ও উদ্যোগ (ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যবেক্ষণ

বিকল্প ধারণা ও উদ্যোগ (ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভ পর্যন্ত): বৈশিষ্ট্য ও পর্যবেক্ষণ

বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ
বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশ
ঔপনিবেশিক শিক্ষা ধারণার সমালোচনা

বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ)

1.ভারতে ‘হাফ টোন’ প্রিন্টিং পদ্ধতি প্রবর্তন করেন-

(A) উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (B) সুকুমার রায় (C) পঞ্চানন কর্মকার (D) চার্লস উইলকিন্স

Ans. (A) উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

2.বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়

(A) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে (B) ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে (৫) ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে (D) ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে

Ans. (B) ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে 

3.বাংলা ভাষায় প্রথম বই ছাপানো হয়-

(A) ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে (B) ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে (C)১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে (০) ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে

Ans. (B) ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে

4.বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট-এর প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন-

(A) অরবিন্দ ঘোষ (B) সতীশচন্দ্র বসু (c) যোগেশচন্দ্র ঘোষ (D) প্রমথনাথ বসু

Ans. (D) প্রমথনাথ বসু

5.’বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল-

(A) ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে (B) ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে (৫) ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে (D) ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে

Ans.  (B) ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে 



সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন (SAQ)

1.উনিশ শতকে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’-এর ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর: উনিশ শতকে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশের জন্য মহেন্দ্রলাল সরকার ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিজ্ঞান কেন্দ্র সম্পূর্ণ নিজের তত্ত্বাবধানে স্বাধীনভাবে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে মৌলিক গবেষণার ব্যবস্থা করে ও বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের

বিজ্ঞান চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে তোলা হয়।

2.বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে বটতলা প্রকাশনার গুরুত্ব কী?

উত্তর: কলকাতার আদি প্রকাশনা শিল্প ছিল আপার চিৎপুর রোডের বটতলা প্রকাশনা। এখানে মূলত হ্যান্ডমেড পেপারে ছাপচিত্রের মাধ্যমে স্বদেশি কারিগরেরা চটি বই, পুঁথি, পাঁচালি প্রকাশ করত। এখান থেকে অনুবাদ সাহিত্যও প্রকাশিত হত। উনিশ শতকের কলকাতা ও ‘বাবু’ সংস্কৃতি সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য এখান থেকে পাওয়া যায়।

3.চার্লস উইলকিনস্ কে ছিলেন?

উত্তর: বাংলা ছাপা হরফের প্রথম যথার্থ পরিকল্পনা করেছিলেন চার্লস উইলকিন্স। তিনিই প্রথম ছেনিকাটা বাংলা হরফ নির্মাণ করেছিলেন বলে তাঁকে ‘বাংলা মুদ্রণ শিল্পের জনক’ বলা হয়। একাজে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন হুগলির পঞ্চানন কর্মকার। হেস্টিংস সাহেবের অনুরোধে পরবর্তীকালে তিনি সরবারি ছাপাখানার দায়িত্ব নেন। হ্যালহেডের ব্যাকরণ ‘এ গ্রামার অব বেঙ্গল ল্যাঙ্গোয়েজ’ এন্ড্রুজ সাহেবের ছাপাখানায় তাঁর দ্বারাই প্রথম ছাপা হয়। তাঁর হাত ধরেই ছাপার আয়নায় বাঙালি প্রথম নিজেকে খুঁজে পায়। তিনি ‘বাংলার গুটেনবার্গ’ নামেও অভিহিত হন।

দীর্ঘ উত্তর প্রশ্ন (LAQ)

1.বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশে ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের’ কী ভূমিকা ছিল?

উত্তর: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের অঙ্গরূপে গড়ে ওঠে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট।

প্রতিষ্ঠা: বিশিষ্ট আইনজীবি ও শিক্ষাদরদি তারকনাথ পালিতের উদ্যোগে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।

উদ্দেশ্য: এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বিদেশি নিয়ন্ত্রণমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন এবং বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার।

পৃষ্ঠপোষকগণ: এই শিক্ষায়তনের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন প্রমথনাথ বসু এবং প্রথম সভাপতি

নিযুক্ত হন রাসবিহারী ঘোষ। এ ছাড়াও মহারাজা মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দী, ভূপেন্দ্রনাথ বোস, নীলরতন

সরকার প্রমুখ শিক্ষাব্রতী প্রথম থেকেই এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করেন।

পাঠ্যক্রম: প্রথমদিকে এখানে দুই রকমের পাঠ্যক্রম চালু হয়। একটি ছিল তিন বছরের

অন্তর্বর্তী পাঠ্যক্রম। অপরটি ছিল চার বছরের মাধ্যমিক পাঠ্যক্রম। প্রবেশিকা পরীক্ষায়

অনুত্তীর্ণ ছাত্ররাও এখানে অন্তর্বর্তী পাঠ্যক্রমে ভরতি হওয়ার সুযোগ পেত। এখানে গ্রন্থ

প্রকাশনা, রং মাখানো, ছুতোরের কাজ, বিভিন্ন ধরনের খোদাই করা, সাবান তৈরি, চামড়া

ট্যান করা প্রভৃতি শেখানো হত। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা মাধ্যমিক পাঠ্যক্রমে ভরতির

সুযোগ পেত। এদের পাঠ্যক্রমের তিনটি প্রধান বিষয় ছিল-যন্ত্র বিজ্ঞান ও বৈদ্যুতিক যন্ত্র

বিজ্ঞান, ফলিত রসায়ন এবং ভূবিদ্যা। প্রমথ বসু, শরৎ দত্ত, প্রফুল্ল মিত্র প্রমুখ খ্যাতনামা

শিক্ষক এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সমন্বয়: ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সঙ্গে মিশে যায়। আর

স্বাধীনতার পর ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।

মন্তব্য স্বদেশি যুগের এই বিজ্ঞান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নিঃসন্দেহে অঙ্কুরিত

হয়েছে স্বদেশবোধ ও জাতীয়তাবোধ। ঔপনিবেশিক শিক্ষার পুতুল গড়ার কল ভেঙে প্রকৃত মানুষ গড়ার শপথ নিয়েছিল এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এর সঙ্গে যুক্ত শিক্ষাব্রতীরা।

2.ছাপাবাহ-এর সঙ্গে শিক্ষাবিস্তারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো | ছাপাখানা বাংলায় শিক্ষাবিস্তারে কীরূপ পরিবর্তন এনেছিল? 

উত্তর: চলমান হরফের প্রচলন ও মুদ্রণ বিপ্লব সারাবিশ্বের জ্ঞানচর্চাকে মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগীর হাত থেকে মুক্ত করে পৌঁছে দিয়েছিল সাধারণের দোরগোড়ায়। ভারত তথা বাংলায় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জাগরণ, সর্বোপরি গণশিক্ষার প্রসারে ছাপাখানা ও ছাপাবই-এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

বস্তুতপক্ষে, ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষার প্রসার-বিষয় দুটি বিশ্বের সব দেশেই একে অপরের পরিপুরক হিসাবে কাজ চিহ্নিত। বই-এর বিশাল চাহিদার জোগান তখনই সম্ভব হয়, যখন তা ছাপানোর জন্য যথেষ্ট সংখ্যক ছাপাখানা প্রস্তুত থাকে, আবার গণশিক্ষার প্রসার না ঘটলে ছাপাখানা তথা ছাপাবই-এর কোনো কদরই থাকে না।

পূর্বেকার হাতে লেখা পুঁথি ছিল অনেকক্ষেত্রেই দুর্বোধ্য এবং স্বাভাবিক ভাবেই পঠন-পাঠনের প্রতিকূল। কিন্তু ছাপাখানায় ছাপাবই এই অসুবিধা দূর করে। একই ধরনের বই বহু সংখ্যায় ছাপার সুবিধার জন্য সার্বিক পাঠ্যক্রম প্রণয়নে সুবিধা হয়। ছাপাবই দামে সস্তা হওয়ায় সেগুলি সাধারণ মানুষের হাতে সহজে পৌঁছে যায় এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজের মাতৃভাষায় শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পায়। ফলে গণশিক্ষার বিপুল প্রসার ঘটে।

উইলিয়াম কেরি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠা করলে শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে। মিশন প্রেস থেকে সুলভে ছেপে বেরোয় অসংখ্য পাঠ্যপুস্তক।

সুলভে বা বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে গড়ে ওঠে ‘স্কুল বুক সোসাইটি’। ‘দিগ্দর্শন’, ‘সমাচার দর্পণ’, ‘সম্বাদ কৌমুদী’, ‘সমাচার চন্দ্রিকা’, ‘সংবাদ প্রভাকর’ প্রভৃতি অসংখ্য পত্র-পত্রিকা এখান থেকে প্রকাশিত হয় গণশিক্ষার ধারাকে বেগবর্তী করেছিল। ক্রমে ক্রমে গড়ে ওঠে আরো অসংখ্য ছাপাখানা, আর পাল্লা দিয়ে প্রকাশিত হতে থাকে ছাপাবই।ছাপাখানা শিশুশিক্ষার অগ্রগতি ও প্রসার ঘটায়, প্রকাশিত হয় মদনমোহন তর্কালংকারের ‘শিশুশিক্ষা’, বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’, রামসুন্দর বসাকের ‘বাল্যশিক্ষা’ প্রভৃতি। ছাপা- খানায় মাতৃভাষায় প্রকাশিত হতে থাকে পঞ্জিকা, আইন, ধর্ম, নীতিকথা, ইতিহাস, কৃষিকাজ,

সঙ্গীত, চিকিৎসা প্রভৃতি বিষয়ের বই-যার ফলে উচ্চশিক্ষার দরজা খুলে যেতে থাকে শিক্ষার্থীদের সামনে। ছাপা হয় আঞ্চলিক ও অনুবাদ সাহিত্য।

এইভাবে মধ্য-অষ্টাদশ, উনবিংশ শতকে ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা ও প্রসার বহুমাত্রিক অভিধায় বাংলাকে প্রাণ-চঞ্চল করে তুলেছিল। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বাঙালি তথা ভারতবাসী পৌঁছে গিয়েছিল নবজাগরনের দোরগোড়ায়।





Scroll to Top